ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়নের পশ্চিম আলগীর ঝালডাঙ্গা বিলে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিকেলে আল-আমিন কমিটির সার্বিক পরিচালনায় এবং ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী মুজাহিদ বেগের পৃষ্ঠপোষকতায় এ প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়।
নৌকা বাইচ ঘিরে ঝালডাঙ্গা বিল ও আশপাশের এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয় উৎসবের আমেজ। হাজারো মানুষ ভিড় জমায় প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে। কেউ দাঁড়ান রেললাইনের ওপর, কেউবা শত শত ছোট-বড় নৌকায় চড়ে বাইচের রোমাঞ্চকর দৃশ্য উপভোগ করেন। দর্শকদের করতালি ও উল্লাসে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।
স্থানীয়দের মতে, নৌকা বাইচ কেবল একটি খেলা নয়; এটি গ্রামীণ ঐতিহ্যের গর্ব। তরুণ প্রজন্মের মাঝে আনন্দ ছড়িয়ে দিতে এবং সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করতে এ আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
মেলার আমেজে মুখরিত চারপাশ
প্রতিযোগিতা উপলক্ষে এলাকায় বসে গ্রামীণ মেলা। অস্থায়ী দোকানগুলোতে মিলেছে চটপটি, ফুচকা, চালতার আচার, ঝালমুড়ি, জিলাপি, হালিম, চপ-সিঙাড়া, কাবাবসহ নানা মুখরোচক খাবার। পাশাপাশি রঙিন বেলুন, খেলনা ও স্থানীয় হস্তশিল্পের দোকানও আকর্ষণ করেছে ছোট-বড় সবার দৃষ্টি।
নৌকা বাইচ শেষে আয়োজন করা হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। প্রতিযোগিতায় দুই দল সমান অবস্থানে পৌঁছালে দু’দলকেই ফ্রিজ পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয়।
বজ্র এক্সপ্রেস পেল একটি ফ্রিজ।
মেঘনা তরী পেল একই রকম আরেকটি ফ্রিজ।
শাপলা শালুক, তৃতীয় স্থান অধিকার করে জিতেছে একটি এলইডি টেলিভিশন।
এছাড়া অংশগ্রহণকারী আরও কয়েকটি নৌকা দলকে উৎসাহমূলক পুরস্কার হিসেবে টিভি ও অন্যান্য উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়।
পুরস্কার পেয়ে প্রতিযোগীরা যেমন উচ্ছ্বসিত, তেমনি দর্শকরাও করতালির মধ্য দিয়ে বিজয়ীদের অভিনন্দন জানান।
প্রধান অতিথি মুজাহিদ বেগ বলেন,
“নৌকা বাইচ আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যের অন্যতম প্রধান অংশ। এ ধরনের আয়োজন শুধু বিনোদন নয়, বরং সামাজিক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করে। আমি সর্বদা চেষ্টা করব এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং আরও বড় আকারে আয়োজন করতে।”
স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি দেলোয়ার মাতব্বর বলেন,
“গ্রামের মানুষ এই প্রতিযোগিতার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে। আজকের বিপুল জনসমাগমই প্রমাণ করে, মানুষ কতটা উৎসাহী নৌকা বাইচ ঘিরে।”
তরুণ প্রতিনিধি তাইজুল বলেন,
“বর্তমান যুগে যেখানে মোবাইল ও ইন্টারনেটের আসক্তি তরুণদের গ্রাস করছে, সেখানে নৌকা বাইচ তাদের ঐতিহ্যের প্রতি গর্বিত করে এবং আনন্দ দেয়।”
পুরো প্রতিযোগিতা নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক তৎপর ছিলেন। এছাড়া একাধিক গণমাধ্যমকর্মীও অনুষ্ঠানটি কভার করতে উপস্থিত ছিলেন।