জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক বিশাল গণমিছিল ও গণজমায়েত। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেলে জোহরের নামাজ আদায় করে ভাঙ্গা শহরের দশানী ঈদগাহ মসজিদ মাঠ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয় এই বর্ণাঢ্য মিছিল।

মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক—থানা রোড, টিনপট্টি, ট্রাফিক মোড়, উপজেলা চত্বর, গোল চত্বর হয়ে আবার ঈদগাহ মসজিদ মাঠে এসে শেষ হয়।

এ সময় এলাকার সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় দশ হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন, যা স্থানীয়ভাবে বিরল একটি দৃশ্যপট তৈরি করে।

নেতৃত্বে ছিলেন জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতারা

এই বিশাল আয়োজনের নেতৃত্ব দেন ফরিদপুর-৪ আসনের প্রার্থী, ভাঙ্গা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ছরোয়ার হোসেন। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ভাঙ্গা পৌর জামায়াতের আমির ডা. মো. এনায়েত হোসেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ভাঙ্গা উপজেলা শাখার সভাপতি ও ফরিদপুর জেলা শাখার তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াস হাওলাদার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

নেতারা বলেন, “এই গণমিছিল শুধু একটি দিবস উদযাপন নয়, এটি আমাদের জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক সক্ষমতা এবং জনগণের সঙ্গে আমাদের আত্মিক বন্ধনের বহিঃপ্রকাশ।”

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্ব তুলে ধরেন বক্তারা

গণজমায়েতে বক্তারা বলেন, জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থান ছিল এই দেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত, যেখানে ছাত্র-জনতা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। সেই সময়ের সাহসী তরুণরা জীবন বাজি রেখে রাষ্ট্রীয় দুঃশাসন, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, এক বছর পার হলেও সেই শহীদদের হত্যার বিচার হয়নি। আহতদের পুনর্বাসনেরও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি সরকার—যা অত্যন্ত হতাশাজনক।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে জামায়াতের অঙ্গীকার

মাওলানা মোহাম্মদ ছরোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে বলেন:
আমরা এমন একটি রাষ্ট্র চাই যেখানে থাকবে আইনের শাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বিরোধী মতকে দমন নয় বরং যুক্তির মাধ্যমে মোকাবেলা করা হবে। আজকের এই গণমিছিল সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতীক।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি—জুলাই গণহত্যার বিচার শুরু করুন, রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কার করুন, এবং সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন। যেন আর কোনো শহীদের রক্তে এই মাতৃভূমি রঞ্জিত না হয়।”

জামায়াতে ইসলামী: আদর্শিক আন্দোলনের প্রতীক

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, বরং একটি আদর্শিক আন্দোলন। তারা দীর্ঘদিন ধরে সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ ও গঠনমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে। জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় দলটি ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।

দলের নেতৃবৃন্দ বলেন, “আমরা কারো বিরুদ্ধে নয়, আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আমরা দমন-পীড়নের রাজনীতি বিশ্বাস করি না, বরং গণতন্ত্র, শান্তি ও সমৃদ্ধির পক্ষে।”

ভাঙ্গায় অনুষ্ঠিত এই বিশাল গণমিছিল স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক ভিত্তি এখনো মজবুত, জনগণের আস্থা এখনো রয়েছে তাদের আদর্শে। তারা ভবিষ্যতে গণতন্ত্র, ইনসাফ ও উন্নয়নের রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।